ভিডিও

কোনো অশান্তি ছাড়াই পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শিল্পাঞ্চলের ভোট নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হলো

নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়ে যারপরনাই খুশি আসানসোল শিল্পাঞ্চলের ভোটাররা

আবদুল হক, রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জি ও কৌশিক মুখার্জি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নির্ভীক বাংলা, আসানসোল:১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সাত দফার লোকসভা নির্বাচন পর্বের এবার চতুর্থ দফার ভোটগ্রহন চলছে সোমবার ১৩ মে সকাল থেকে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল শিল্পাঞ্চলের ভোটারদের লম্বা লাইন বুথে বুথে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হলো
শিল্পাঞ্চলের ভোট মানেই ছিল হানা হানি, লড়াই, সন্ত্রাস কিন্তু এই ২০২৪লোকসভা ভোট ছিল এক অন্যরকম
চতুর্থ দফার লোকসভা ভোটে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ। যেখানে সকাল থেকেই ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতন।সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকাল সকাল তার নিজের মতামত ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে প্রকাশ করছে।শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এই দফায় অন্ধ্রপ্রদেশের ২৫, তেলেঙ্গানার ১৭, উত্তরপ্রদেশের ১৩, মহারাষ্ট্রের ১১ এবং মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ৮ টি করে আসনে ভোট হচ্ছে। এছাড়া বিহারের ৫টি আসনে,উড়িষ্যা ও ঝাড়খন্ডে চারটি করে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের একটি আসনে ভোট হচ্ছে। লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা অধীর চৌধুরী,সমাজবাদি পার্টির শীর্ষ নেতা অখিলেস যাদব সহ ১ হাজার ৭১৭ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে আজ সোমবার। পশ্চিমবঙ্গের যে ৮ আসনে ভোট হবে সেগুলো হলো- বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম ও বোলপুর। এসব আসনে তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান,কীর্তি আজাদ,শত্রুঘ্ন সিনহা,কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী,মহুয়া মৈত্র,রাজমাতা অমৃতা রায়,অভিনেত্রী শতাব্দী রায় ও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। এ দফার ভোটে বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদি পার্টি ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র লড়াই হবে। প্রতিটি রাজ্যেই প্রাদেশিক রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপির থেকেও শক্তিশালী। এবার আসানসোল আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি দ্বিতীয়বার এই আসনে লড়ছেন। আর বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। বীরভূম আসনে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়।এই আসনে তিনি আগে দুবার জিতেছেন। এই আসনের বিজেপির প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য। এই দুই আসনেই লড়াই হবে মূলত তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে। এইদিন আসানসোল শিল্পাঞ্চলের মন্ত্রী, মেয়র, বিধা য়ক, ভোট প্রার্থী ও নেতা নেত্রীরা তাদের নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন
এইদিন সকাল ৮টা নাগাদ মন্ত্রী মলয় ঘটক তার নিজের কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সংবাদিক দের জানান যে এখনো পর্যন্ত ভোট শিল্পাঞ্চলের নির্বিঘ্নে চলছে ,

ভোট দিলেন আসানসোলের দক্ষিণের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অগ্নি মিত্রা পাল। LIC ৪৩ নাম্বার বুথে মা বাবা কে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেয়
ভোট দিলেন বাম জোট প্রার্থী জাহানারা খান।আসানসোল জামুড়িয়া নিউ কেন্দা এলাকায় ভোট দিলেন।225 নাম্বার বুথে
কুলটি বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক ডাক্তার অজয় পোদ্দার সপরিবারে বরাকরের আদর্শ বিদ্যালয়ের 192 বুথে ভোট দিলেন
কুলটি বিধানসভার বরাকরের 193 নম্বর বুথ শ্রী সত্যনারায়ণ ভগৎ ফ্রী প্রাইমারি স্কুলে প্রায় 25 মিনিট ধরে ই ভি এম বিকল হওয়ার ফলে ভোট দান কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।
আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত সৃষ্টি নগর করুণাময়ী হাউজিং সেন্ট্রাল এক্সাইজ অফিসে বুথ নম্বার 281/28 রবিবার সকালে ভোট দিলেন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তথা বারাবনি বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। তিনি এদিন জানান তৃণমূল কংগ্রেস সন্ত্রাস করে না। এবং এলাকাতে খুব শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে।
কুলটি বিধানসভার চলবলপুর প্রাইমারি স্কুল বুথ নম্বর ১৩ । সিপিআইএমের লড়াকু নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি । এইদিকে
কন্ট্রোল রুমে বসে ভোট পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছিলেন আসানসোল লোকসভার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দার সিং আহলুওয়ালিয়া। আসানসোলের একটি বেসরকারি হোটেলে কন্ট্রোলরুমে বসে তিনি পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন সকাল সাড়ে নটা পর্যন্ত 13 শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে বলেও জানান তিনি। বেলা বাড়তেই দেখাগেলো
পাণ্ডবেশ্বর প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তেওয়ারীকে পুলিশের বাধা। পাণ্ডবেশ্বর যাবার পথে বহুলা মোডের কাছে পুলিশ তার গাড়ি আটকে দেয়।তার সঙ্গে গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন বাপ্পা চ্যাটার্জী।প্রায় আধ ঘন্টা তার গাড়ি আটকে রাখে পুলিশ।পরে নির্বাচন কমিশনারের পাশ দেখালেও তাকে পাণ্ডবেশ্বর যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে জানাযায়, এইদিকে
জামুড়িয়া:-জামুড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নিমসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের 199 নম্বর বুথে,বাবার ভোট দিলো ছেলে।ছেলেটি তার বাবার পরিবর্তে ভোট দিয়েছে।বুথের বাইরে তাদের প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এইদিন দেখা গেলো
লোকসভা নির্বাচনে স্বামীর জয়ের লক্ষ্যে মন্দিরে পুজো দিলেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী।
তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা যে হোটেলে রয়েছেন সেই হোটেলের সামনের দুর্গা মন্দিরে পুজো দিয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী পুনম সিনহা। শিল্পাঞ্চলের যে মডেল ভোট গ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছিল তার
পরিদর্শনে এলেন অবজারভার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সালানপুর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক দেবাঞ্জন বিশ্বাস এদিন পরিদর্শনে এসে অবজারভার জানান সালানপুর ব্লকের সমস্ত এলাকায় নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে ই ভোট গ্রহণ চলছে।

জামুড়িয়া বিধানসভার বেনালি গ্রামের বনমালীপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০৫ বুথে ইভিএম মেশিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভোট না দিয়ে অনেক ভোটার বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়। এইদিকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে যে
আসানসোল পুরসভার 17 নম্বর ওয়ার্ডের কুলটির লালবাজার এলাকায় 58 / 59 নম্বর বুথে উত্তেজনা । বিজেপির অভিযোগ কুলটি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি বিমান দত্ত দলবল নিয়ে বুথে ঢোকার চেষ্টা করে । ঐ ওয়ার্ডের ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও কি করে বিমান দলবল নিয়ে সেখানে আসে ? এই প্রশ্ন তুলে বিজেপি প্রতিবাদ করলে দু পক্ষের তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হয় । পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে । বেলা বাড়তেই ২৯৮নম্বর বুথ পরিদর্শনে যান
আসানসোলের উত্তর বিধানসভার ঈদকা এলাকার একটি বুথে , তৃণমূল কংগ্রেস তারকা প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি সেখানে যান ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। আবার
বুথের বাইরে মোদির হয়ে প্রচার করার অভিযোগ উঠলো বুথের বাইরে কর্মরত বিএসএফ জওয়ানের উপরে।সাথে বুথের ভিতরে বিজেপির বুথ এজেন্ট ভোটারদের এক নাম্বার বোতাম টিপে ভোট দেওয়ার আবেদন করছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল।ঘটনাটি সালানপুর ব্লকের ডাবর কলিয়ারীর 116 নাম্বার বুথে।অভিযোগ মোবাইলে মোদির প্রচারের ভিডিও চালিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছে কর্মরত বিএসএফ জওয়ান।তারই সঙ্গে বুথে আগত ভোটারদের খোলাখুলি বলা হচ্ছে বিজেপিকে ভোট দেবার জন্য।এমনি অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দীনেশ লাল শ্রীবাস্তব।
চতুর্থদফায় পশ্চিমবঙ্গের আট আসনে ভোট গ্রহণ হয়ে গেল সোমবার। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবেই হল এ দিনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই আটটি আসনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে গড়ে ৭৫.৬৬ শতাংশ।উপরের তালিকা থেকেই স্পষ্ট, ভোটের হারে সবচেয়ে এগিয়ে বোলপুর (৭৭.৭৭ শতাংশ)। অন্য় দিকে, কম ভোট পড়েছে আসানসোল আসনে। আসানসোলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৯.৪৩ শতাংশ।

এ দিন পশ্চিমবঙ্গের আটটি আসন-সহ দেশের মোট ৯৬টি আসনে ভোটগ্রহণ হল। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই ৯৬টি লোকসভা কেন্দ্রে সামগ্রিক ভাবে ৬২.৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোট শেষ হওয়ার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালিয়া বলেন, বড় কোন ঘটনার খবর পাইনি। ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর নিচ্ছি। সবকিছু স্ক্রটিনি করা হচ্ছে। তেমন হলে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। জেলা সভাপতি বলেন, ৭৭ টি বুথে দলের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয় নি। বিজেপির তরফে সন্ধ্যে পর্যন্ত ১৬৩ টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মতে, নেতারা আসেন, লম্বা-চওড়া প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কাজের বেলায় কিছুই তেমন হয় না। অতএব, এবারের ভোটে কে জিতবেন বা কে হেরে যাবেন সে নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। তবে, তারা চাইছেন, ভোটে যিনি জিতুন না কেন আসানসোলের উন্নতির স্বার্থে যেন একটু নজর দেন। মানুষ একটা প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দেয়। আশা করে, তাদের সমষ্টিগত দাবিগুলো নির্বাচিত জননেতারা পূরণ করবেন। অনেকের কাছে ভোট এখন আতঙ্কের বিষয়। মারামারি, খুন জখম, ভোট লুট, ভয় দেখানো প্রভৃতি আজ নির্বাচনের অপরিহার্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে , সেইখানে দাঁড়িয়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চল এই ২০২৪লোকসভা ভোটে এক অনন্য নজর সৃষ্টি করলো। কখন যে সন্ত্রাস হানা দেবে কেউ জানে না। সেই সকল ভয় কে জয় করে শিল্পাঞ্চলের মানুষ নির্বিঘ্নে শান্তিতে ব্যাপক হারে ভোট দিলেন, বিদ্বজনদের মতে মানুষ তার পছন্দসই প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়ে যারপরনাই খুশি আসানসোল শিল্পাঞ্চলের ভোটাররা ।

TAGS

সম্পর্কিত খবর